রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প কাহিনী। বন্ধুরা প্রিয় মানুষটির সাথে ভালোবাসার গল্প করতে চাইলে একটু রোমান্টিকতা হওয়ার দরকার তাই আজকের এই গল্প গুলো নিয়ে হাজির হলাম।
জীবনে ভালোবাসার মানুষের চাইতে ভালো রাখার মানুষ থাকাটা ভীষণ জরুরী।ভালো তো
সবাই বাসতে পারে কিন্তু ভালো রাখতে পারে ক'জন!!
জীবনে ভালোবাসার মানুষের অভাব না হলেও ভালো রাখার মতো মানুষের বড্ড অভাব।
"আমি তোমাকে ভালোবাসি" কথাটা যে কেউ
দিব্যি করে একশবার বলতে পারলেও "আমি তোমাকে ভাল রাখবো" এই প্রতিশ্রুতি
দেবার মতো মানুষ সবার জীবনে থাকে না। আর যার জীবনে ভালো রাখার মতো একজন মানুষ থাকে
তার জীবনে আর অতিরিক্ত ভালোবাসার মানুষের দরকার পড়ে না।কারণ যে ভালো রাখতে জানে
সেই মানুষটাই সত্যিকার ভালোবাসতে জানে।
তুমি মানুষটাকে ভালো রাখতে পারো মানে তুমি পুরো মানুষটাকেই বুঝতে পারো,পুরো মানুষটাকেই ভালোবাসতে পারো। ভালোবাসার মানুষটাকে যদি ভালো রাখতেই না
পারো তাহলে কেমন ভালোবাসো তুমি?
কাউকে ভালোবাসা মানে রাত জেগে কেবল গল্প করা,রোমান্টিক
রোমান্টিক কথা বলা,কথায় কথায় ভালোবাসি,ভালোবাসি বলে কবিতা আওড়ানো কিংবা দামী খাবার বা গিফট নয়।কিংবা ভালোবাসা
মানে "তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না" বলে হা হুতাশ করা নয়।ভালোবাসা মানে সবার
আগে মানুষটাকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেয়া।আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে
আমি তোমাকে ভালো রাখবো কথা দিলাম।
আরও পড়ুন: বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প
কাউকে ভালো রাখতে বেশি কিছু দরকার পড়ে না।
দামী গাড়ী, বড় বাড়ি,দামী গিফট
কিচ্ছু না।
মানুষটা তোমার সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে,তোমার
সান্নিধ্যে হ্যাপি ফিল করে,তোমার আন্তরিকতায় মুগ্ধতা প্রকাশ করে, তোমার কেয়ারে নিজেকে ধন্য মনে করে,তোমার
স্পর্শে নিজেকে পরিপূর্ণ মনে করে,তোমাকে
বিশ্বাস করে নিশ্চিন্তে ঘুমায়,তুমিহীনা
নিঃসঙ্গ বা শূণ্যতা অনুভব করে মানেই মানুষটাকে তুমি ভালো রাখতে পেরেছো।মানুষটাকে তুমি পুরোপুরি ভালোবাসতে পেরেছো।
জীবনে এমন একজন ভালো রাখার মানুষ যার আছে তার জীবনে ভালোবাসার মানুষ কি আদৌ
লাগে?সোনা রেখে কাঁচ কুড়ায় কোন বোকা বলুন তো!!
কলমেঃ প্রজ্ঞা অনূসুয়া।


চিনি না জানি না একজনের সাথে আজ আমার বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের আগে তার সাথে
আমার শুধুমাত্র একবার ফোনে কথা হয়েছিলো। সে আমার মতামত জানার জন্য ফোন করেছিলেন।
দাদির অসুস্থতার জন্য বাবা খুব তারাতারি আমার বিয়েটা দিয়ে দিলেন। পরিবারের বড় মেয়ে
আমি। দাদির ইচ্ছা ছিলো দু চোখ বুজার আগে নাতনির বিয়ে দেখে যাবে। তাই হুট করেই
বিয়েটা হয়ে গেলো।
আমি জানিনা মানুষটা কেমন হবে। কেমন হবে তার বাড়ির লোকজন। ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা
হয়ে আসছে আমার। উনি রুমে এসেই আমাকে বলল,
ফ্রেশ হয়ে
নিন। আর ওপাশে টেবিলের উপর খাবার রাখা আছে। নিশ্চয়ই ক্ষিদে পেয়েছেন আপনার। সারাদিন
যা ধকল গেলো। শুনেছি বিয়ের দিন নাকি মেয়েরা এমনিতেও ঠিকমতো খেতে পারে না। একটা
নার্ভাসনেস কাজ করে। এরকম হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। আপনি ফ্রেশ হয়ে খাবারটা খেয়ে নিন
ততোক্ষনে আমি একটু মেইল-চেক করি। ভয় পাবেন না আমি বেলকনিতে আছি।
আমি লোকটার কথায় ভীষন অবাক। বান্ধবীদের থেকে শুনেছিলাম, বিয়ের দিন নাকি হাসবেন্ডরা বউয়ের সাথে গল্প করে। রোমান্টিক কথাবার্তা বলে।
উনি তো তেমন কিছুই বললেন না! আমি ফ্রেশ হয়ে খাবারটা খেয়ে নিলাম। ভাগ্যিস উনি বুঝতে
পেরেছিলেন আমার ক্ষিদে পেয়েছে। পেটে খিল ধরে গেছে সারাদিনের ধকলে।
খাবার খাওয়ার পর আমি চুপচাপ বসে আছি। উনি বেলকনি থেকে এসে বললেন, এ কি আপনি এখনও ঘুমান নি? সারাদিন
অনেক ধকল গেছে আপনি নিশ্চয়ই ভীষন ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি আলো নিভিয়ে দিচ্ছি।
আমি ইতস্তত হয়ে বললাম, না মানে
আলো নিভানোর দরকার নেই। অন্ধকারে আমার ভয় করে।
আরও পড়ুন: রোমান্টিক কথাবার্তা
সে একটা হাসি দিয়ে বললেন, ওকে যেমন
আপনার ইচ্ছে।
সকালে ঘুম থেকে জাগতেই দেখি টেবিলে ব্রেকফাস্ট রাখা। আমি কি দেরি করে
ফেললাম! না ঘড়িতে তো সবে মাত্র পোনে আটটা বাজে। এতো খাবার কে বানালেন! শুনেছি ওনার
মা নেই। অন্য কেউ হয়তো বানিয়েছে।
আমার শ্বশুরের বিজনেস আছে শুনেছি। সকাল সকাল নাস্তা খেয়েই উনি বেরিয়ে
পরলেন।
খাওয়া শেষ হতেই আমার বর বললেন,
দুপুরের
রান্না আমি করে রেখেছি। আর বুয়া এসে সব ধোয়ামোছার কাজ করে দিয়ে যাবে। আপনার কিছু
করতে হবে না।
আমি হালকা পাতলা রান্না জানি তবে উনার মুখের উপর আর কিছুই বললাম না। হ্যাঁ
সূচক মাথা নাড়লাম।
দুপুরে খাবার খেতে খেতে মনে হলো,
লোকটার
হাতের রান্না খুবই সুস্বাদু। মা নেই তাই হয়তো রান্না করতে করতে অভ্যেস হয়ে গেছে
বেচারার। এসব ভাবতে ভাবতেই দেখি উনি ফোন করেছেন। ধরতেই বললেন, আপনি কি কি খাবার খেতে পছন্দ করেন আমাকে একটু কাইন্ডলি ম্যাসেজ করে দিবেন? একচুয়েলি আমার আবার মনে থাকে না। অফিস থেকে ফেরার সময় সব নিয়ে আসবো।
আমি খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে ভীষন লাজুক। বলতে ভীষন অস্বস্তি লাগলো। আমি
শান্ত গলায় বললাম, আমি কিছু খাবো না। আপনাকে ভাবতে হবে না
বাসায় যথেষ্ট খাবার দাবার আছে। আপনি সাবধানে আসবেন।
কথাটা বলে ভীষন ইতস্ততবোধ করলাম। উনি হুম বলে ফোন রেখে দিলেন।
রাতে বাসায় ফিরতেই দেখি এ ব্যাগ খাবার দাবার নিয়ে এসেছেন। আমার শ্বশুর
আমাকে ডেকে বললেন, তোমার যখন যা মন চাইবে খাবে কেমন মা? এটা তোমারই বাড়ি। নিজের বাড়িতে যেভাবে থাকতে এখানেও সেভাবেই থাকবে।
আরও পড়ুন: আমি তোমাকে ভালবাসি
আমি নিচু স্বরে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। আমার মনেই হয় না যে আমি অচেনা
একটা জায়গায় এসেছি। বাবা আর ছেলে দুজনেই আমার ভীষন খেয়াল রাখছেন। অথচ বিয়ের আগে ভয়ে একদম চুপসে ছিলাম।
এক সপ্তাহ কেটে গেছে। এখনও তারা আমাকে একটা কাজও করতে দেন না। কাজ করতে
চাইলেই রাগারাগি করেন। কি অদ্ভুত মানুষ! আমারই বা সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকতে ভালো
লাগে নাকি!
রাতে আলমারি গোছাতে গোছাতে হঠাৎ একটা পুরনো ছবির এ্যালবাম খুঁজে পেলাম। উনি
তখন ল্যাপটপে কাজ করছিলেন। আমি এ্যালবাম খুলে দেখলাম একটা ছোট্ট বাচ্চা ছেলে একজন
ভদ্রমহিলার কোলে। দেখেই বুঝতে পারলাম এটাই উনার মা মানে আমার শাশুড়ি মা। ছবি নিয়ে
উনার সামনে গিয়ে বললাম, মা তো দেখতে ভীষন সুন্দর ছিলেন
মাশাআল্লাহ। আপনিও অনেক কিউট ছিলেন ছোট বেলায়। কিন্তু এখন একটু গোমড়ামুখো হয়ে
গেছেন। না মানে ছবিটায় দেখুন কিভাবে হাসছিলেন আপনি। মাঝে মাঝে তো একটু হাসতে পারেন
নাকি!
আমি জানিনা ছবিটা দেখে উনি কেনো রেগে গেলেন। কিছু না বলেই হুরমুর করে রুম
থেমে বেড়িয়ে গেলেন।
আমারই হয়তো ভুল হয়েছে। ছবিটা দেখে হয়তো উনার মায়ের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল।
বুয়ার সাথে একটু হাতে হাতে কাজ করছিলাম এমন সময় উনি ডেকে বললেন, আপনাকে নিয়ে একটু শপিংয়ে যাবো ভেবেছি। কখন বেরোতে চান? আজ তো অফ ডে আমি সারাদিনই ফ্রি আছি। আর রান্নাঘরে যাওয়ার দরকার নেই বুয়া সব
কেটেকুটে রেখে গেলে আমি চট করে রান্নাটা করে ফেলবো।
আমি রাগি গলায় বললাম, সারাক্ষণ
শুয়ে বসে থাকতে আমার ভালো লাগে না। আমি বুয়ার সাথে একটু সাহায্য করি?
উনি চুপচাপ রুমে চলে গেলেন।
বুয়াকে বললাম, আচ্ছা খালা উনার মায়ের কি হয়েছিলো? মানে কোনো অসুখ বিসুখ করে মারা গিয়েছিলেন?
ওনাকে
জিজ্ঞেস করলে কখনও বলেন না। আর বাবাকে জিজ্ঞেস করার সাহস হয় নি।
বুয়া বলল, ইয়ে মানে বউ আমার একটু তারা আছে বুঝলা।
সবজি কাটা হইয়া গেছে আমি এহন যাই।
খুব ভালো ভাবেই বুঝলাম খালা আমার কথাটা এড়িয়ে গেলো। ভীষন অদ্ভুত লাগছে।
রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় উনি কফি নিয়ে আসলেন। কফি খেতে খেতে
বললেন, আপনার আমার মায়ের ব্যাপারে জানতে ইচ্ছে
করে তাই না?
আমি কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললাম,
বলতে না
চাইলে ইট’স ওকে।
সে গম্ভীর স্বরে বললেন, আমার যখন
তিন বছর বয়স তখন আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে যায়। বাবার সংসারে তখন ভীষণ অভাব অনটন
ছিল। একদিন বাবা জানতে পারে মায়ের অন্য কারো সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। যার
কাছে অনেক টাকা-পয়সা আছে। আমার মা আমাকে ফেলে ঐ লোকটার সাথে পালিয়ে যায়। পরে বাবা
ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়েছিল। বাবা একা হাতে আমাকে মানুষ করেছে। কখনও বুঝতেই দেয়
নি মায়ের অভাব। তবে বড় হওয়ার পর যখন সবটা বুঝতে পারি তখন বাবা একদিন আমাকে ডেকে
বলেন, জীবনে ভালোবাসার সাথে সাথে টাকা-পয়সারও
দরকার আছে। আজকাল টাকা ছাড়া কেউ কারো হাত ধরে না। নিজের বউকে সব সময় সুখে রাখার
চেষ্টা করবি। চেষ্টা নয় বরং সুখেই রাখবি। কোনো কিছুর অভাব বুঝতে দিবি না। তবে
অবশ্যই সব কিছুর আগে তাকে সম্মান করবি। সে কি চায় তার কিসে অসুবিধা হচ্ছে সেদিকে
খেয়াল রাখবি। আমার জীবনে যা হয়েছে আমি চাই না তা তোর জীবনে ও হোক। নিজের স্ত্রী কে
সব সময় ভালোবাসবি।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,
বাবাও তো
ভালোবেসেছিলেন। ধরে রাখতে পেরেছিলেন কি?
আসলে যে
ভালোবাসে তার টাকা-পয়সা কোনো কিছুরই প্রয়োজন হয় না। আর যে ভালোবাসে না তাকে আসলে
কোনো কিছু দিয়েই বেঁধে রাখা যায় না। সবাই টাকা চায় না। কিছু কিছু মানুষ শুধু একটা
ভরসা করার মতো মানুষ চায় যে সব সময় তাকে বিপদে আগলে রাখবে। আর আমি সেই মানুষটাকে
পেয়েছি। এক জীবনে আমার আর কিছুর প্রয়োজন নেই।
সে মৃদু হেসে বলল, রান্নাটা সেরে নেই তারপর আবার আপনাকে নিয়ে
বেরোতে হবে।
আমি রাগি গলায় বললাম, আপনার
হাতের রান্না খেয়ে খেয়ে আমার পেটে চর পরে গেছে। আর পারছি না। এবার একটু নিজের
বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে দেখুন নয়তো অফিস কলিগদের আড্ডায় বলবেন কি করে আমার বউ
দারুন রান্না করে!
Zannatul Eva
No comments:
Post a Comment